স্বদেশ ডেস্ক:
উম্মে সালমা (৩০) নামে এক নারীকে গত রোববার গ্রেপ্তার করেছে চট্টগ্রাম পুলিশ, যিনি তার স্বামী রফিকুল ইসলাম (৪৫) হত্যা মামলার বাদী ছিলেন। পরকীয়ায় বাধা দেওয়ায় স্বামীকে জবাই করে হত্যার পর লাশ ফেলে পালিয়ে গিয়েছিলেন ওই নারী।
একবছর পর হত্যারহস্য উদ্ঘাটনের দাবি করে পিবিআই কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মূলত পরকীয়ায় বাধা দেওয়ায় স্বামী রফিকুল ইসলামকে খুন করান উম্মে সালমা। এতে তার সহযোগী ছিলেন প্রেমিক সাকিবুল ইসলাম। খুনটি করেন ৩০ হাজার টাকা দিয়ে ভাড়া করা ব্যক্তি মো. এমরান।
২০১৯ সালের ৩ ডিসেম্বর সীতাকুণ্ড উপজেলার ভাটিয়ারিতে সীতাকুণ্ড-হাটহাজারী সড়কের রেলওয়ে ওভারব্রিজের কাছে লাউ ক্ষেত থেকে রফিকুলের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এরপর কোনো কূল-কিনারা করতে না পারায় থানা পুলিশের কাছ থেকে মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পায় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
ঘটনার আদ্যোপান্ত
২০১৯ সালের ৩ ডিসেম্বর রফিকুলের লাশ উদ্ধারের পর স্ত্রী সালমা বাদী হয়ে অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে সীতাকুণ্ড থানায় মামলা করেন। আট মাস তদন্ত শেষে কিছু না পেয়ে সীতাকুণ্ড থানা পুলিশ মামলাটি হস্তান্তরের জন্য পুলিশ সদর দপ্তরে আবেদন করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে তদন্তে আসে পিবিআই। মামলার তদন্তভার পড়ে পিবিআই, চট্টগ্রাম জেলার এসআই কামাল আব্বারে ওপর।
কামাল জানান, সাকিবের সঙ্গে সালমার পরকীয়া ছিল। বিষয়টি রফিকুল ইসলাম জেনে যাওয়ায় তার স্ত্রীকে মারধর করে এবং তাদের মধ্যে দাম্পত্য কলহ সৃষ্টি হয়। এ নিয়ে সাকিব ও সালমা মিলে রফিকুলকে খুন করার পরিকল্পনা করে। এজন্য তারা ৩০ হাজার টাকা দিয়ে এমরানের সঙ্গে চুক্তি করে।
পরিকল্পনা অনুযায়ী, টেলিফোনের মাধ্যমে রফিকুলকে সীতাকুণ্ড-হাটহাজারী সড়কের রেলওয়ে ওভারব্রিজের কাছে ডেকে নেওয়া হয়। তিনি সেখানে এলে রফিকুলকে জবাই করে খুন করে লাশ পাশ্ববর্তী লাউ ক্ষেতে পুঁতে রেখে পালিয়ে যায় আসামিরা। ঘটনার সময় খুনের স্থানে সালমা আড়ালে উপস্থিত ছিলেন।
গত ২৪ ও ২৬ অক্টোবর সাকিব ও এমরানকে গ্রেপ্তার করে পিবিআই। পরে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহার করা ছুরি উদ্ধার করেন সদস্যরা। এরপর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সালমার নাম উঠে আসে। সাকিব ও এমরান জানান, সালমা তাদের আশ্বস্থ করেছিল এ মামলায় তাদের কিছু হবে না। কারণ সে নিজেই বাদী হবে।
ঘটনার পর সালমা স্বামীর লাশ নিয়ে তার শ্বশুরবাড়ি নাটোর যাওয়ার পর সেখান থেকে বগুড়ায় তার বাবার বাড়িতে চলে যান, তারপর থেকে তিনি আর চট্টগ্রামে আসেননি। থানা পুলিশ তাকে বিভিন্ন সময়ে মামলার বিষয়ে আসতে বললেও তিনি সহায়তা করেননি।
পিবিআই কর্মকর্তা কামাল জানান, তদন্তে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে বগুড়ার আনন্দ নগর থানা এলাকা থেকে রোববার সালমাকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাকে চট্টগ্রামে এনে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। আজ মঙ্গলবার তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিনের জন্য হেফাজতে চেয়ে আদালতে আবেদন করা হবে।